Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

তিল বা আঁচিল |সৌন্দর্য নাকি বিপদ?

$
0
0

ভাবুন দেখি, একসময়ের বিশ্ব মাতানো সংগীতশিল্পী ম্যাডোনা কিংবা সৌন্দর্যের দেবী বলে খ্যাত হলিউড মডেল ও অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর ঠোঁটের পাশের তিলটির কথা! ওই একটিমাত্র তিল তাদের সৌন্দর্যকে করেছে বহুগুণ, করেছে আকর্ষণীয় আর কাম্য। ঠোঁটের কোনে, গালে কিংবা ঘাড়ে ছোট্ট একটি তিল। শুধু হলিউড কেন, বাঙালি নারীরাও পিছিয়ে নেই। সুচিত্রা সেন, সুজাতা, শর্মিলী আহমেদ, পারভীন সুলতানা দিতি- যাদের চেহারায় থাকা তিল এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাদের ভাবমূর্তির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। শরীরের কোনো বিশেষ অংশে একটি তিলের অবস্থান সেই অঙ্গের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে সাধারণত। ইংরেজিতে ‘ফ্রিকেলস’ নামে পরিচিত শরীরের কালো কালো এই দাগগুলো ক্ষেত্র বিশেষে আবার ‘বিউটি স্পট’ নামেও পরিচিত।

সবার শরীরের নানা স্থানেই কম বেশি তিল থাকে। ছোট-বড় সব ধরণের তিলই দেখা যায়। তবে শরীরে এদের আধিক্য দেখা দিলে বা তা দেখতে বিদঘুটে আকৃতির হলে, অনেক সময় প্রকৃতির এই উপহার কারো কারো জন্যে উপদ্রব হয়ে উঠতে পারে। তখন এগুলো দেখতে তো অস্বাভাবিক লাগেই, এমনকি বাইরের কোন উদ্দীপনার প্রভাবে এগুলো পরিবর্তিত হয়ে ত্বকের ‘মেলানোমা’ নামক মারাত্মক ক্যান্সারেও রূপ নিতে পারে। আর তাই তিল, আঁচিল বা জড়ুলের মেলানোমায় রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়গুলো জানাতে আজকের এই আয়োজন।

 

তিল আসলে কী?

ত্বকের সৌন্দর্যবর্ধক এসব তিল বা জড়ুল আসলে এক ধরনের ‘বিনাইন টিউমার’, অর্থাৎ এই টিউমার মারাত্বক নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে বলে ‘মেলানোসাইটিক নিভাস (Melanocytic nevus)’। সাধারণত, ত্বকের রঞ্জক পদার্থ মেলানিন উৎপন্নকারী কোষ ‘মেলানোসাইট’ ত্বক জুড়ে সমানভাবে বিস্তৃত হয়ে ত্বকের রং তৈরি করে। তবে কোথাও কোথাও এরা গুচ্ছবদ্ধ হয়ে সংখ্যাবৃদ্ধি করার ফলে উৎপন্ন হয় মেলানোসাইটিক নিভাস। এগুলো চামড়ার সাথে সমতল বা উঁচু হয়েও থাকতে পারে, হতে পারে গোলাকৃতির বা ডিম্বাকৃতির, কোনো কোনোটিতে আবার লোম গজাতেও দেখা যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে গড়ে দশ থেকে চল্লিশটি তিল থাকা স্বাভাবিক।

তিল বা আঁচিল আসলে কী? - shajgoj

তিল কিংবা আঁচিলকে সাধারণভাবে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেই না। মানুষের শরীর পরিপূর্ণভাবে বিকাশের সাথে সাথে গড়ে ওঠে এগুলো। তবে সামান্য এই তিল কিংবা আঁচিলই অনেক সময় ত্বকে মেলানোমা নামক মারাত্মক ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রয়োজন সাবধানতা ও সঠিক নির্দেশনা। তবে আর দেরি না করে আসুন জেনে নেই তিল কিংবা আঁচিল থেকে ত্বকে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ সম্পর্কে।

  • স্বাস্থ্যকর তিলগুলো সাধারণত একই রঙের হয়ে থাকে। কিন্তু এটি মেলানোমায় রূপান্তরিত হতে শুরু করলে এর রঙের গাঢ়ত্বের পরিবর্তন দেখা দেয়।
  • তিল বা জড়ুল সাধারণত গোলাকৃতি বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে, অপরদিকে মেলানোমার এরকম নির্দিষ্ট কোনো আকৃতি থাকে না।
  • তিল প্রাথমিক অবস্থা থেকে বড় হওয়া বিপদের লক্ষণ। সাধারণভাবে বলা হয়, পেন্সিলের মাথায় লাগানো রাবারের চেয়ে (৬ মিমি) বড় হলে সেটির ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
  • কিনারা উঁচু, আঁকাবাকা, এবড়োথেবড়ো মনে হতে পারে বা আশেপাশের চামড়ার সাথে মিলিয়ে যেতে পারে।
  • আগে যে তিল সমতল ছিল, হঠাৎ সেটি উঁচু হয়ে ওঠা বা একটি পিণ্ডের মত মনে হওয়া। আগের চেয়ে শক্ত বলেও মনে হতে পারে।
  • নিভাসের মাঝখান বরাবর যদি একটি রেখা কল্পনা করা হয় এবং দেখা যায় এর এক অর্ধাংশের সঙ্গে অপর অর্ধাংশের মিল পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে এটি বিপদের লক্ষণ।
  • এছাড়াও তিলে চুলকানি, রক্তপাত বা প্রদাহ দেখা দিলেও তা সতর্কবার্তা হিসেবে গণ্য।

গবেষকদের মতে, শরীরে কোন তিল বা আঁচিল দেখে অস্বাভাবিক মনে হলে বা ব্যথা হলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি ত্বকের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজি’-তে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তিল বা আঁচিলের যেকোনো অস্বাভাবিকতাই ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা

দেখতে শুনতে নিরীহ একটি তিল কেন ক্যান্সারে রুপ নেয় তার সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কারণ চিহ্নিত করা না গেলেও, যেসব কারণে মেলানোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে সেগুলো সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যেমন-

  • বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মেলানোমা বা ত্বকের ক্যান্সারের জন্য সবচাইতে বেশি দায়ী ‘আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি’। সুর্যের আলো আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রধান উৎস।
  • মানবসৃষ্ট বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও মানুষ অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসতে পারে। এই রশ্মি চামড়ার কোষের ডিএনএ-এর ক্ষতি করে, ফলে মেলানোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ‘কনজেনিটাল মেলানোসাইটিক নিভাস ( Congenital Melanocytic Nevus)’ বা জন্মদাগ পরবর্তিতে ক্যান্সারে রুপ নিতে পারে, যার হার ০-১০%। তাই শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিভাসের কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
  • নিজের বা বংশের নিকটাত্মীয়দের কারো পূর্বে মেলানোমার ইতিহাস থাকলে এটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • যাদের একটু বেশি ফর্সা চামড়া অর্থাৎ যাদের শরীরে মেলানিন কম, সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মিতে তাদের ত্বকের ক্ষতি হয় তুলনামূলক বেশি।
  • শরীরে পঞ্চাশটির বেশি তিল থাকলে বা তা সংখ্যায় বাড়তে থাকলে ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

প্রতিরোধে যা করণীয়

সকাল দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত বাইরে থাকতে হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, কারণ এই সময় সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির তেজ বেশি থাকে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। কড়া রোদে যাওয়ার সময় হাত ঢাকা পোশাক পরুন। ট্যানিং বেড এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি ডায়েট অথবা ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারির মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার যেমন গ্রিন টি, পেপে, গাজর, পালংশাক ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে হবে। শরীরের কোন অংশে নতুন তিল দেখলে কিংবা পুরনো তিলের রঙ, আকার বা অন্য কোন ধরনের পরিবর্তন, ত্বকের কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সচেতনতা বজায় রাখুন, সুস্থ্য থাকুন।

ছবি- টুইটার.কম


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles