রমজান মাসে ঈদের ঠিক ২-৩ দিন আগে থেকে চুল আর ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো লেগে পরে। কিন্তু সেটাতে কোনই লাভ হয়না । চুল আর ত্বকের যত্ন নেয়া খুবই ধৈর্য আর সময়ের বিষয়। তাই ঈদের এক মাস আগে থেকেই যত্ন করুন। ত্বক , চুলের অন্যান্য যত্ন এখন থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে নিলে ঈদের আগে আপনার ত্বক ও চুল প্রাণহীন দেখাবে না।
ত্বকের যত্নে
সারাদিন রোজা রেখে ত্বক কিছুটা প্রাণহীন হয়ে পড়ে । এ সময় যত্ন নেয়ার সময়টা তাই পাল্টাতে হয় । যেহেতু পানির অভাবে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। তাই ইফতারের পর থেকে শুরু করতে পারেন ত্বকের যত্ন।
- পানির অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে । তাই ইফতারের পর বা নামাজের পর ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে পারেন । মুখে লোশন লাগিয়ে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা থাকুন । চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়বে না।
- এ সময় সব রকমের টোনার জাতীয় প্রসাধন এড়িয়ে চলুন । মেকআপ কম ব্যবহার করুন ।
- অনেক সময় চোখের নিচে কালো হয়ে থাকে ক্লান্তির কারণে । তাই ঘুম ঠিক সময়মতো দরকার । আলু, টমেটো ও শসার রস লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন । এতে কালো দাগ দূর হবে।
- ঘুমানোর আগে ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন । আপনার ত্বকের সাথে যেসব ফেসপ্যাক সুট করে সেগুলো ব্যবহার করুন ।
- এ সময় গরম বেশি থাকে । রোদের তাপে মুখে কালো দাগ হতে পারে । সেসব থেকে বাঁচতে ব্যবহার করতে পারেন লেবুর ফেসপ্যাক । লেবু , মধু আর মুলতানিমাটি একসাথে মিশিয়ে মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন । গোলাপ জল আর শশা দিয়ে তৈরি ফেস প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটি যেকোনো ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- ঠোঁটের আলাদাভাবে যত্ন নিন । কারণ এ সময় ঠোঁট ফেটে যায়। রাতে ঘুমাবার আগে ঠোঁটে বিটরুট আর দুধ একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে ম্যাসেজ করুন । এছাড়া ঠোঁটের যত্নে নারিকেল তেল ম্যাসাজ করতে পারেন ।
- গরমে বডি-লোশন ব্যবহার করতে না চাইলে নিয়মিত ত্বকের উপযোগী ভালো কোন সাবান ব্যবহার করুন।
- বাড়িতে এ সময় বিভিন্ন ধরনের খবার থাকে । রাতে কলা , পাকা পেঁপে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন সাথে শসার রস নিন এবং মুখে লাগিয়ে ২০ মিন রেখে ধুয়ে ফেলুন । ত্বক উজ্জ্বল হবে।
- কড়া পারফিউমে ত্বকের ক্ষতি হয় অনেক সময়। তাই সেটা ব্যবহার না করাই ভালো।
- রমজানে হালকা মেকাপের মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখুন । অথবা মেকআপ না করাই ভালো । ঘর থেকে বের হবার আগে সামান্য প্রেসড-পাউডার লাগাতে পারেন।
- রোজায় ঠোঁটে কোন লিপস্টিক বা প্রসাধনী না লাগানোই ভালো।
- পারলে ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।
- রোজায় আমাদের ভাজাপোড়া খাওয়া শুরু হয়ে যায় । এসবের খারাপ প্রভাব পরে ত্বকের উপর । হালকা খাবার খাওয়া এ সময়ে সব থেকে ভালো।
- ইফতারির একটি ভালো খাবার হলো সরবত। তাজা ফল, টক-দই বা দুধ মিশিয়ে শরবত তৈরি করা যেতে পারে। এতে ত্বক শক্তি ফিরে পাবে।
চুলের যত্নে
- সারা দিন পানি পান করা হয় না। এতে অনেকের চুলও পড়ে যায়। ইফতারের পর পানি পান করতে হবে।এছারাও খেজুর, বিভিন্নশরবত, দই ইত্যাদি পানি জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
- চুলের যত্নে এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। এবং অবশ্যই প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে। এ সময় হুট করে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যায় এবং পানি কম খেতে হয়। এগুলো প্রভাব ফেলে চুলের উপর , চুল পড়ে এবং রুক্ষ হয়ে যায়। সপ্তাহে দু-তিন দিন ইফতারের পর চুলে তেল মালিশ করুন। এতে রক্ত চলাচল ভালো হবে।
- চুল নরম আর উজ্জ্বল করতে টক দই অথবা কলা লাগিয়ে ১০ মিন পর ধুয়ে ফেলুন।
- মাথায় আলোভেরা জেল লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন।
- চুল ফেটে গেলে লেবুর রস লাগিয়ে রাখুণ ২০ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সারাদিনের রোজা থাকার ক্লান্তি আপনার ত্বক এবং চুলকেও নির্জীব করে ফেলে। তাই এ সময়ে এসবের সঠিক যত্নের প্রয়োজন।
লিখেছেন – সোহানা মোরশেদ