কফি!!! আধুনিক জীবনের সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে গেছে এই জাদুকরি পানীয়টির নাম। কফির পেয়ালায় চুমুক না দিলে অনেকেরই দিনটা ঠিকমতন শুরু হয় না । এই ছোট্ট বাদামী বীজের গল্পের শুরুটা কিন্তু বেশ অনেককাল আগে। প্রচলিত ধারণামতে কফি আবিষ্কৃত হয় ৯ম শতকের দিকে ইথিওপিয়া অঞ্চলের কালদি নামের এক রাখালের হাত ধরে। তার ছাগলের পাল ২০-৩০ ফুট লম্বা এক গাছের লাল টুকটুকে ফল খেয়ে এক অদ্ভুতরকম উত্তেজনা দেখায়। তারপর সে নিজেও এ ফল চিবিয়ে বুঝতে পারে এর আশ্চর্য্য সঞ্জীবনী শক্তির কথা। এরপর ধীরে ধীরে সাধুসন্ন্যাসীদের কাছে এ ফল সমাদৃত হতে থাকে কারন এ ফলের সঞ্জীবনী শক্তি তাদের ক্লান্তিহীনভাবে প্রার্থনার শক্তি যোগাত। ইথিওপিয়া থেকে আরব, ইয়েমেন, তুরস্ক ঘুরে যোল’শ শতকে কফি পৌছায় ইউরোপে যা এখন পরিণত হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিক্রিত পণ্য এবং সবচেয়ে প্রচলিত পানীয়তে।
ক্যাফেইন এবং এন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর এই পানীয় তৈরীর গল্পটাও কিন্তু এর ইতিহাসের মতনই বেশ বড়সড়। গাছ থেকে আপনার হাতের ধোঁয়া ওঠা এক কাপ কফিকে পার হয়ে আসতে হয় অনেকগুলো ধাপ। গাছের সবুজ ফল পেকে লাল পরে বাদামি হওয়ার পর পারা হয়, তারপর এর ভেতরে থাকা বীজটিকে নিয়ে শুরু হয় প্রক্রিয়াজাতকরন। ড্রাই, রোস্টিং, ক্রাশিং এর মতন ধাপগুলো পেরিয়ে কফি হয়ে ওঠে পানযোগ্য। কফির গুনাগুণ ও স্বাদ নির্ভর করে কফি বিনের এসিডিটি, রোস্টিং এর সময়, রোস্টিং এর তীব্রতা, বিনকে গুড়ো করার ধরন, কফি বিন থেকে তরল কফি নিষ্কাশনের পদ্ধতি ইত্যাদি বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ের উপরে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হলেও অঞ্চলভেদে কফি পান করার কায়দা কিন্তু বেশ বৈচিত্রময়। চলুন দেখে নেই পৃথিবীর বিভিন্নদেশে কফি কিভাবে পান করা হয়।
ইতালীঃ ইতালিয়ান এক্সপ্রেসো কফি জগত বিখ্যাত। ছোট্ট সাদা কফি কাপে হালকা ফেনায় ঢাকা, কড়া মোহনীয় স্বাদের এ কফি ইতালির ক্যাফেগুলোতে খুব প্রচলিত। সাধারণত সকাল সকাল এক কাপ এক্সপ্রেসোর সাথে দিন শুরু করেন ইতালীয়রা।
তুরস্কঃ তুর্কীদের মতে তাদের কফি নরকের মতন কালো, মৃত্যুর মতন শক্তিশালী এবং ভালোবাসার মতন মিস্টি। গাঢ়, ঘন, মিস্টি কড়া স্বাদের এই টার্কিশ কফি সাধারনত খাবারের পরে পরিবেশন করা হয়। বালির অভেনে ফোটানো আর লম্বা তামার পাত্র হতে উঁচু জায়গা থেকে দক্ষ হাতে পরিবেশন করা এ কফি শুধু চাখার-ই না দেখার মতন জিনিষও বটে!
ফ্রান্সঃ ফরাসিরা তাদের কফি পান করতে ভালোবাসে শহরের রাস্তার ধার ঘেঁষে থাকা ক্যাফেগুলোতে। ‘ক্যাফে-অও-ল্যাতে’ নামের প্রচুর দুধ মেশানো কড়া কফি আর একটা ক্রোসার সাথে ফরাসীদের সকালের শুরু হয়।
মেক্সিকোঃ মেক্সিকানরা ‘ক্যাফে-ডে-ওলা’ নামের কফিতে বুদ! মাটির পাত্রে ফোটানো কফি সাধারনত তৈরী হয় গাঢ় রোস্টের কফি বিন থেকে। ব্রাউন সুগারের স্মোকি স্বাদ ও দারুচিনির ঘ্রাণ মেশানো এ কফি মেক্সিকানদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিউবাঃ কিউবার কফি বিখ্যাত এর দুর্দান্ত ঘ্রাণ ও কড়া স্বাদের জন্য। কিউবার লোকজন কফিকে শুধু পানীয় নয় সামাজিক যোগাযোগের এক প্রক্রিয়া হিসেবে মানে। সাধারণত অল্প পরিমানে কড়া কফি ‘শট’ হিসেবেই পান করা হয় সেখানে।
আয়ারল্যান্ডঃ ডিনার পরবর্তী পানীয় হিসেবে পান কড়া আইরিশ কফি অনেকটা ককটেলের স্বাদের। গরম কফির সাথে চিনি, আইরিস হুইস্কি আর ক্রিম মেশান এ কফি পরিবেশন করা হয় স্বচ্ছ কাচের একজাতের মগে।
কারোর দিনের শুরুতে কেউবা দিনের শেষে, যেভাবেই হোক কফি আর ক্যাফেইনের এই মেলবন্ধন কমবেশি সকল সংস্কৃতিতেই তার ছাপ রেখে গেছে যা এখনো চলছে।
লিখেছেনঃ সাজিয়া আফরীন স্নিগ্ধা