Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

মাদক ও মাদকাসক্তি: মাদক দেহে ও মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে ? (পর্ব ১)

$
0
0

মাদক বা ড্রাগস হলো বিষধর সাপের বিষাক্ত ছোবলের মতো যা প্রতিনিয়ত একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তিকে ধীরে ধীরে তার দংশনে নিঃশেষ করে দেয়। যার প্রভাব আমরা আমাদের যুব সমাজে বেশি দেখিতে পাই। কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কি? যুব সমাজের এই পরিণতির জন্য অনেকাংশে দায়ি শুধুমাত্র মাদক দ্রব্য এবং মাদকাসক্তি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকা !

পাঠকগণ আমি আপনাদের কাছে নিয়ে আসলাম তিন পর্বের একটি প্রতিবেদন যেখানে আপনারা মাদক সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। আজকের পর্বে আপনারা মাদক এবং মাদকাসক্ত ব্যাক্তি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবেন ।  

মাদক দ্রব্য এবং মাদকাসক্তি কি ?  

মাদক দ্রব্য হলো একটি ভেষজ দ্রব্য যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে এবং যা আসক্তি সৃষ্টি করে। মাদক দ্রব্যে বেদনানাশক কর্মের সাথে যুক্ত থাকে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, মেজাজ পরিবর্তন, মানসিক, আচ্ছন্নতা রক্তচাপ  পরিবর্তন  ইত্যাদি । মাদক দ্রব্য গ্রহণ করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক  অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে  এবং দ্রব্যের উপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে ব্যাক্তির এই অবস্থাকে বলে মাদকাসক্তি এবং যে গ্রহণ করে তাকে বলে মাদকাসক্ত।  

বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য  

মাদক দ্রব্য  আসলে কি কি সেটার নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নাম বলা সম্ভব নয়। মানুষ  নেশার জন্য যা ব্যবহার করে  তাই মাদক দ্রব্য। সেটি হতে পারে ইনজেকশন , ধূমপান  বা যে কোন মাধ্যম।

drug 1

বিভিন্ন ধরণের মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হিরোইন , কোকেন , ইয়াবা, আফিম , মারিজুয়ানা , গাজা , ফেনসিডিল , বিয়ার , কেটামিন , স্পিড , বিভিন্ন রকমের ঘুমের ওষুধ থেকে শুরু করে জুতা লাগানোর  আঠা পর্যন্ত।

drug 2

অনেকে বিভিন্ন ধরণের এনার্জি ড্রিংকসের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে নেশা করে থাকে । বিভিন্ন ধরণের মাদক গ্রহণের ফলে মানুষের  চোখের যে পরিবর্তন হয় তা ছবিতে দেখুন ।        

drug 3

মাদক দেহে ও মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে ?

নিওরো কেমিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে ,মাদক সেবনের  পরপরই   ব্যাক্তির মস্তিষ্কের কিছু কিছু জায়গায় অতি দ্রুত এবং বেশি পরিমাণে  ডোপামিন  নামক নিওরোট্রান্সমিটার বৃদ্ধি পায়,যা একজন ব্যাক্তিকে মাদকের আনন্দ দেয়। এবং পরবর্তী কালে ব্যবহারে উৎসাহিত করে। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত তাদের বেলায় আবার উল্টোটা দেখা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘদিন মাদক নেয়ার ফলে যে ডোপামিন একজন মানুষকে নেশার  আনন্দ দিত তা আস্তে আস্তে  কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

প্রকৃতপক্ষে দেখা  যাচ্ছে, মাদকাসক্ত ব্যাক্তি আসলে একটা সময়ে আর আনন্দের জন্য নেশা নিচ্ছে না। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয় এবং  এটা থেকে একসময় বের হয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রথম পর্যায়ে মাদক মানুষকে এমন একটি আনন্দ দেয় যার কাছে মজাদার জিনিসগুলো যেমন খাদ্য , পানীয়  এবং যোন মিলনের আনন্দের মত আনন্দের জিনিসগুলো ম্লান হয়ে পড়ে। কারণ এই ছোট ছোট আনন্দগুলো মানুষ একই নিওরোট্রান্সমিটার অর্থাৎ ডোপামিন এর মাধ্যমে পেয়ে থাকে। মাদকের আনন্দের সাথে  পাল্লা দিয়ে এই আনন্দগুলো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং মাদকই হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত ব্যাক্তির একমাত্র চিন্তা চেতনা।

দীর্ঘদিন মাদক ব্যবহারকারীদের ডোপামিন এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের যে সমস্ত জায়গা ডোপামিন এর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে সেই জায়গাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

মাদক গ্রহণের পরিমাণের  ভিন্নতার কারণে দেহে ও মস্তিষ্কে এর প্রভাব ভিন্ন হয়। খুব অল্প পরিমাণে মাদক উদ্দীপক বস্তু হিসেবে কাজ করে। বেশি পরিমাণে মাদক গ্রহণ করা হলে তা যন্ত্রণাদায়ক হিসেবে কাজ করে। বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে যার পরিণতি হয় মৃত্যু ।

কিছু কিছু মাদক দ্রব্য সরাসরি মনকে আক্রমণ করে।এতে করে মাদক গ্রহণকারী তার চারপাশে কি ঘটছে তার উপলব্ধি হারিয়ে ফেলে। মাদক একজন ব্যাক্তির সকল ইন্দ্রীয় চেতনাকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়।  যার ফলে ব্যাক্তি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারেনা। তার চিন্তাধারা নেতিবাচক হয়ে পড়ে ।

ছবি – ড্রাগআবিউজ ডট কম

লিখেছেন –     জোহরা হোসেন 


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles